



এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে অনেক তরুণ সিএসপি [বিসিএসের পূর্ব নাম] অফিসার হতে চাইতেন। কিন্তু এ ধারণা বদলে গেছে। স্মার্ট করপোরেট কালচার এবং ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণায় পুষ্ট হয়ে এখন অনেকেই যে যার মতো পেশা বেছে নিচ্ছেন এবং তা দিয়েই সফলতা ছিনিয়ে আনছেন। তবু এখনও বিসিএসের লোভ সামলাতে পারেন না অসংখ্য তরুণ। তাই অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার গণ্ডি পেরুনোর আগেই তারা বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন।
আপনি যদি সেই পথে নাও হাঁটেন; আপনার যদি লক্ষ্য থাকে দেশ গড়ার কারিগর হয়ে, দেশকে নিজের মতো করে গড়ে তোলার তুমুল ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার, তাহলে আপনাকে আগাম সাধুবাদ জানাই। বলি, বিসিএস নামে এই সোনার হরিণকে তাড়া করতে পারেন আজ থেকেই। প্রস্তুতি নিতে পারেন নতুন করে। একটু মনোযোগ আর খাটাখাটুনিতেই হতে পারেন বিসিএস ক্যাডার। তবে প্রস্তুতিতে নামার আগে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। পরিশ্রম আর প্রচুর পড়াশোনার পাশাপাশি মুখোমুখি হতে হবে সঠিক দিকনির্দেশনারও।




কোটার হিসাব
অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার চেয়ে এখানে কোটার আধিপত্য বেশি। তাই এই কোটা পদ্ধতি নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক থাকলেও কোটা প্রথা বাদ দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই এখন পর্যন্ত। বর্তমান ব্যবস্থায় বিশেষ বিসিএস ছাড়া অন্য সব বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি-নাতনি কোটায় ৩০ শতাংশ, মহিলা কোটায় ১০ শতাংশ, উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ এবং জেলা কোটায় ১০ শতাংশ নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধী কোটা রয়েছে ১ শতাংশ।
ক্যাডার নির্বাচন




বিসিএসে এসে অনেকেই ক্যাডার নির্বাচন বা বাছাই করতে গিয়ে ভুল করে বসেন। ক্যাডার সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না যারা, তারাই পড়েন এ বিপদে। তাই দেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষায় নামার আগে নিজের মনমতো ক্যাডার পছন্দ করুন। সব ক্যাডার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে তারপর আপনার পছন্দানুযায়ী ক্রমানুসারে লিস্ট তৈরি করতে পারেন। যাতে যে কোনো একটি ক্যাডার পেলেই চাকরি শুরু করতে পারেন মনের আনন্দে।
পছন্দের ক্যাডার পেলে কাজের প্রতি ভালোবাসাটা বেড়ে যাবে আপনার। তা ছাড়া এতে আপনার পাশাপাশি দেশও উপকৃত হবে। তাই অধিকাংশ লোকের মতো আপনিও ভুলে পা না বাড়িয়ে ক্যাডারগুলো সম্পর্কে একটি নূ্যনতম ধারণা নিন। তারপর বেছে নিন আপনার পছন্দের পেশা।
মনে রাখবেন, একজন লোক যদি তার কাজকে ভালোবাসে আর শ্রদ্ধা করে এবং সে অনুযায়ী সৎভাবে কাজ সম্পাদন করে তবে তার সাফল্য নিশ্চিত, তার কাজ যা-ই হোক না কেন।




অধ্যবসায়
পরিশ্রম ও তুমুল খাটাখাটুনিই আপনাকে পারে নিজের অভীষ্ট লক্ষ্যে পেঁৗছে দিতে। আপনি হতে পারেন সিভিল সার্ভিসের একজন গর্বিত সদস্য। হতে পারেন ম্যাজিস্ট্রেট, এএসপি কিংবা শিক্ষক। আর তাই নিজেকে গড়ে তুলতে হবে পরিশ্রমী ও নিরহঙ্কার মানুষ হিসেবে এবং অস্বাভাবিক সব চিন্তা পেছনে ফেলে এখন থেকেই প্রস্তুতিতে নেমে পড়ূন। ভুলে যান অস্বাভাবিক কোটা কিংবা আপনার দুর্বল সিজিপিএর কথা। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো রেজাল্ট থাকে আপনার, তবে সেটাও ভুলে যান। শুধু বুঝতে শিখুন, আপনাকে নতুনভাবে শুরু করতে হবে। ভাবতে হবে, আরও অনেক কিছু জানার বাকি। এই জানার মাধ্যমেই বিসিএস জয় করে আনতে পারবেন আপনি।




লোভনীয় ক্যাডার
বিসিএসে আকর্ষণীয় ক্যাডারগুলোর তালিকায় প্রথম দিকে অবস্থান পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কাস্টম, ট্যাক্স, ইকোনমিক, আনসার। তবে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীর প্রথম পছন্দ প্রশাসন, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পুলিশ এবং তৃতীয় অবস্থানে পররাষ্ট্র।
এবারের শূন্যপদ
৩৭তম বিসিএসে সাধারণ ক্যাডারে মোট ৪৬৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন ছাড়াও পুলিশ ক্যাডারে ১০০ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারে ২০ জন, সমবায় ক্যাডারে ৯ জন, ডাকে ৯ জন, আনসার ক্যাডারে ৭ জন, নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারে ৭ জন, ইকোনমিক ক্যাডারে ৬ জন, তথ্য ক্যাডারে ৬ জন ও রেলওয়ে ক্যাডারে ১ জন নিয়োগ করা হবে। তাই আপনার পছন্দের পদের জন্য আসন্ন পরীক্ষা নামক লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে নেমে পড়ূন আজই।




মান বণ্টন
নতুন নিয়মে দুই ঘণ্টা সময়ে মোট ১০টি বিষয়ের ওপর ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে বাংলা ও ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে ৩৫ করে ৭০, বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ৩০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২০, ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ১০, সাধারণ বিজ্ঞানে ১৫, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ১৫, গাণিতিক যুক্তি ১৫, মানসিক দক্ষতা ১৫ এবং নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন বিষয়ে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।




আবেদন প্রক্রিয়া
৩১ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ২ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। শেষ দিকে বরাবরই চাপ পড়ে। অনেকে দেখা যায়, আবেদনও করতে পারেন না। কাজেই শুরুর দিকে আবেদন করে রাখলে ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে আবেদন পাওয়া যাবে। টাকা জমা দিতে হবে টেলিটকের মাধ্যমে। ছবি, স্বাক্ষর এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
প্রস্তুতিই নিয়ামক
সব জেনেশুনে আপনি আপনার মতো প্রস্তুতিতে নেমে পড়ূন। মনে রাখবেন, আপনি দেশের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেই চাকরির স্বপ্ন দেখে আপনার মতো অসংখ্য তরুণ। বিসিএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং ৩৭তম বিসিএসের আরও তথ্যের জন্য অনলাইনের সাহায্য নিতে পারেন। ঢুঁ মারতে পারেন পিএসসির এই সাইটে-www.bpsc.gov.bd।







