৩৭তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে মেধা তালিকায় ৭৫তম হয়েছিলেন নাসরিন সুলতানা রিপা। তিনি জানিয়েছেন ৪০তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত। আজ থাকছে তৃতীয় পর্ব




বিসিএস পরীক্ষার তিনটি ধাপের মধ্যে লিখিত পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মোট নম্বরের ওপর ভিত্তি করেই ক্যাডার নির্ধারিত হয়। তাই লিখিত পরীক্ষার জন্য যে তথ্য আহরণ বা পড়াশোনা করেছেন, তা চমৎকারভাবে পরীক্ষার খাতায় উপস্থাপন করাই একজন পরীক্ষার্থীর মূল কাজ। উত্তরপত্রে উপস্থাপন সুন্দর না হলে সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। কারণ, পরীক্ষক আপনার জানার চেয়ে খাতায় কীভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা দেখে নম্বর দেবেন। তাই তাকে সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করে আসা জরুরি।




এ ক্ষেত্রে খাতায় কালো ও নীল কালি এবং ক্ষেত্রবিশেষে পেনসিলের ব্যবহার, সর্বোচ্চ গতিতে লেখা, পয়েন্ট, কোটেশন ও রেফারেন্স দেওয়া, সব প্রশ্নের উত্তর করে আসা, প্রয়োজন অনুসারে চিত্রের ব্যবহার, যথাসম্ভব কাটাকাটি না করা, সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ না করা, বানান ভুল না করা, যথাযথ ছক দিয়ে তথ্য উপস্থাপন করা, একটি প্রশ্নের উত্তরে বেশি সময় ব্যয় না করা এবং রিভিশনের সময় হাতে রাখা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে।




বাংলাদেশ বিষয়াবলি :বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ২০০ নম্বর বরাদ্দ আছে এবং সময় ৪ ঘণ্টা। সময়ের সঙ্গে মিল রেখে উত্তর শেষ করে আসাই মূল চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ বিষয়াবলির পরিধি অনেক বড়। তা ছাড়া এর অর্জিত জ্ঞান অন্যান্য বিষয়, যেমন বাংলা ও ইংরেজি রচনায় কাজে লাগে। তাই একে খুব গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। বিশেষ করে তথ্য মাথায় রাখতে হবে। তথ্য জানা থাকলে বডি দাঁড় করাতে পারবেন। বাংলাদেশ বিষয়াবলি ভালো করতে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন :




-বাংলাদেশ বিষয়াবলিতে ভালো করতে হলে সংবিধান ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। সংবিধান থেকে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০-৬০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে। সংবিধানের ১-৪৭ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করবেন। এ ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ হলো ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৭, ৮০, ৮১, ৮৪, ৯৩, ১০২,১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২২, ১৩৭, ১৪১ এবং ১৪২।




-সংবিধানের অনুচ্ছেদ মনে রাখার জন্য নিজের ভাষায় নোট করে পড়বেন এবং বারবার রিভিশন দিন।
-বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য বিগত বিসিএস পরীক্ষার টীকা ও ছোট প্রশ্ন পড়বেন। এখানে কিছু বিষয় আছে, যা বর্তমানে গুরুত্ব হারিয়েছে বা আর নেই, তা বাদ দিন।
-সাম্প্রতিক বিষয় ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন থেকে ইংরেজি ও বাংলা প্রবন্ধ অবশ্যই পড়বেন।




-নবম-দশম শ্রেণির ইতিহাস বইটি রিডিং দিয়ে দেবেন।
-অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮ থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য পড়ে নেবেন। আর ছক মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই। শুধু প্রথম ও সর্বশেষ তথ্য, হার বা চিত্র মাথায় রাখলেই হবে।
-অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের লেখা উচ্চ মাধ্যমিক পৌরনীতি ও সুশাসন দ্বিতীয় পত্র বইটি পড়বেন। ইতিহাস ও রাজনৈতিক ঘটনাবলি মনে রাখলেই হবে।




-রচনামূলক প্রশ্ন পড়ার সময় পয়েন্ট, উক্তি, তথ্য, গ্রন্থের নাম ইত্যাদি বেশি মনে রাখবেন।
-সম্ভব হলে বিভিন্ন বিষয়ে ছোট ছোট করে নিজের মতো করে নোট করতে পারেন। পরীক্ষার আগে রিভিশন কাজে লাগবে।




-সম্পাদকীয় সমাচার নামে একটি পুস্তিকা সংগ্রহ করে নিতে পারেন, যাতে পত্রিকা থেকে সংগৃহীত সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ও বাংলা কলাম আছে।
-বাজারে প্রচলিত যে কোনো একটি বাংলাদেশ বিষয়াবলি লিখিত গাইড সংগ্রহ করে নেবেন। একটিই যথেষ্ট।




-যে কোনো মূল্যেই হোক, পরীক্ষায় সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসবেন। প্রয়োজনে কম করে লিখবেন। কম জানা থাকলেও ধারণার ওপর কিছু একটা লিখে দিয়ে আসবেন।
-অন্যান্য বিষয়ের মতো বাংলাদেশ বিষয়গুলোতে রেফারেন্স দেওয়ার চেষ্টা করবেন। যত রেফারেন্স ও উদ্ধৃতি থাকবে, লেখা তত ভারি।




-সব প্রশ্নের শুরুতে একটা ভূমিকার মতো থাকবে এবং শেষে অল্প করে সমাপনী বক্তব্য দিয়ে দেবেন।