‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস’ (বিসিএস) বাংলাদেশের সব থেকে বড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। বাংলা ডেস্কের বিসিএস প্রস্তুতি বিভাগের পাঠকদের সফলতা প্রত্যাশায় ধারাবাহিক আয়োজনের আজ ৬ষ্ঠ পর্ব: তিনটি নিয়ম রপ্ত করতে পারলেই বিসিএস ক্যাডার হতে পারবেন।




অনেক তরুণ/তরুণীর স্বপ্নের বাসনা বিসিএস ক্যাডার হওয়া। প্রত্যেকেই তাদের লক্ষ্যের শীর্ষে পৌছাতে চায়। কিন্তু সবাই তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। আপনি যদি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ’বিসিএস’ -এ অংশগ্রহণ করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে, আপনাকে তিনটি নিয়ম রপ্ত করতে হবে। যা আপনাকে সফলতা এনে দিবে। বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে আপনাকে তিনটি নিয়ম রপ্ত করতেই হবে। নিয়ম তিনটিকে বিসিএস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার ‘rules of thumb‘ বলা যায়।
১। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষাটা মনের মধ্যে শক্ত করে পুশে রাখতে হবে।




ব্রাজিলিয়ান লেখক ‘পাওলো কোয়েলহো’র’ বিখ্যাত ‘The Alchemist’ গ্রন্থে বলেছেন,‘তুমি যদি কোন কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা পোষণ করো, মহাবিশ্বের সবকিছুই ষড়যন্ত্র শুরু করে দেবে তোমাকে সেটি পাইয়ে দেওয়ার জন্য’। তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোন অর্জনের পথে ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কোন কিছু পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আপনাকে বাধ্য করবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি পেতে যা যা করা দরকার তা তা করতে। সেটা রুটিন মেনে পড়াশুনা করা হোক বা কঠিন কোন প্রশিক্ষণ নেওয়াই হোক।




বিসিএস ক্যাডার হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলতে সর্বাগ্রে নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে। নিজের সামর্থ্যের লেভেলটা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে, ধারণা থাকতে হবে কোন ধরনের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে এবং কোন মাত্রার পড়াশুনা করলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যায়।




আপনার হয়তো বিসিএস ক্যাডারদের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড বা রেজাল্ট নিয়ে অহেতুক ভুল ধারণা থাকতে পারে। সাধারণত মধ্যম-মেধাবী পরীক্ষার্থীরা যাদের যেকোন পর্যায়ে একাডেমিক ফলাফল বা সিজিপিএ মধ্যম মানের বা সাধারণ মানের তারাই সবচেয়ে বেশী বিসিএস ক্যাডার হয় । স্নাতক পরীক্ষায় তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে অনেকেই বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে অসংখ্য ছাত্র/ছাত্রী বিসিএস ক্যাডারে চাকরি করছেন।




বিসিএস পরীক্ষার মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১১০০নম্বরের পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের সময় পরীক্ষক বা পিএসসি’র কেউ জানতে পারেন না কোন পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট কী বা কে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেছে। ভাইভার ২০০ নম্বরের মধ্যে যদি আপনাকে অল্প নম্বর দিয়েও পাশ করানো হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে কমপক্ষে ৮০ নম্বর (পাশ-মার্কস) দিতে হবে। এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির অসংখ্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বিধায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভাতে বাদ পরার সম্ভাবনা কম এবং যেকোনো একটি বিসিএস ক্যাডার বা নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরী পাওয়ার সম্ভাবনা ৬০ থেকে ৮০%।




বিসিএস পরীক্ষা ক্রিকেটের মতো একটি গেম। পরীক্ষার কোনো একটি বা দু’টি বিষয়ে খারাপ করলে অন্যান্য বিষয়ে ভালো করে সফল হওয়ার সুযোগ আছে। শুধু এটার পেছনে লেগে থাকতে হবে এবং বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রম করতে হবে। এটা সত্য যে, কোনো কিছু পাওয়ার দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষা থাকলে আপনার সেটা পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। যেকোন অবস্থায়ই নিজেকে প্রেরণা দ্বারা উদ্দীপ্ত রাখুন। সফলতা আসবেই।




২। পরিকল্পিত পরিশ্রম করা।
চাকরির পড়াশুনার সাথে একাডেমিক পড়াশুনার অনেক পার্থক্য আছে। তাই অনার্স পড়াকালীন একাডেমিক পড়াশুনার ফাঁকেফাঁকে চাকরিপ্রাপ্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করে চাকরির জন্য পড়াশুনা শুরু করলে চাকরি পেতে পেতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স প্রায় শেষ হয়ে আসবে। আপনি যদি একাডেমিক পড়াশুনা শেষ করার দু’বছরের মধ্যে চাকরি না পান তবে আপনার মধ্যে এক ধরনের মনস্তাত্বিক শূন্যতা কাজ করবে, এক ধরনের বেদনাবোধ ও অস্থিরতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে।




এই সংকট কাটাতে অনার্স শেষবর্ষ পরীক্ষা দিয়েই চাকরির পরীক্ষার জন্য কঠিন প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে পারেন। ঠিক করতে হবে আপনার বিসিএস পরীক্ষা প্রস্তুতির অব্যর্থ কৌশল। সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিলে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াটা সহজ হয়ে যায়। আপনাকেও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্যই সিরিয়াসলি বিসিএস পরীক্ষা দিতে হবে। ৬০ভাগ বিসিএস পরীক্ষার্থী অযথাই আকস্মিকভাবে বিসিএস পরীক্ষা দেয়। অনেকে শুধু ভাগ্য বা দৈব’র উপর ভর করেই আধো-প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএস পরীক্ষা দিতে যায়। এটা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র। অন্তত নিজের সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েই বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া উচিৎ। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এই বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন যে, আপনি সামর্থ্য অনুযায়ী অন্তত চেষ্টাটা করেছেন।




অনেকই ভালো ক্যাডারে চাকরি পাওয়ার সকল সামর্থ্য থাকলেও আত্ববিশ্বাসহীনতা আর দায়সারা প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কারণে ক্যাডার সার্ভিসে চাকরি পাননি। অথচ অসংখ্য সাধারণ মেধার শিক্ষার্থী শুধু পরিশ্রম আর লেগে থাকার কারণে বিসিএস ক্যাডার হয়ে গেছে। বিসিএস পরীক্ষার জন্য যারা খুব পরিশ্রম করে তারা বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও অন্য যেকোন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি পেয়ে যায়। যারা বিসিএস কর্মকর্তা হয়েছেন তাদের অন্তত ৪০ভাগ খুব সাধারণ মানের ছাত্র/ছাত্রী আর অসাধারণ পরিশ্রমী ছিলেন।




৩। বিসিএস প্রস্তুতি-কৌশল
আপনার প্রস্তুতি-কৌশল নির্ণয় করতে, সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন করতে কিছু সময় ব্যয় করতে হবে। ‘প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে তারাই যারা কৌশলী ও পরিশ্রমী’। আপনি যত শক্তিশালী বা মেধাবীই হোন না কেন, কৌশল ঠিক না করে কোনো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরলে সে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%, সেটা যত তুচ্ছ যুদ্ধই হোকনা কেন। আপনাকে অবশ্যই বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সিলেবাস ও আপনার সক্ষমতা স্টাডি করতে হবে। সঠিকভাবে সঠিক বইটি পড়তে হবে। বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক পরীক্ষার্থীরই সিস্টেম-লসের কারণে প্রচুর সময়ের অপচয় হয় যা অপূরণীয়। আপনি যদি ভাবেন, পরীক্ষা দিতে দিতেই প্রস্তুতির কৌশলটা রপ্ত করে ফেলবেন, তা হলে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি পেতে পেতে আপনার জীবন-নদীতে অনেক জল গড়িয়ে যাবে।




বিসিএস প্রস্তুতি নেওয়ার সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর কৌশল:
বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের লেখা পরামর্শগুলো পড়তে পারেন। অনেক কর্মকর্তাই মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টপিকের উপর লিখে থাকেন। এতে একটা ধারণা পাবেন।




বিসিএস ‘নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ)বিধিমালা-২০১০ ও সংশোধিত বিসিএস নন-ক্যাডার নিয়োগ(বিশেষ) বিধিমালা-২০১৪ পাশ হওয়ায় সরকারি প্রথম ও ২য় শ্রেণির অনেক পদেই এখন বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১০ সালের আগে নন-ক্যাডারে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হতো না। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে বেতন দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডার(প্রথম শ্রেণি) ও নন-ক্যাডার ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিগুলো খুবই অস্বভাবী আকর্ষণীয় হয়ে গেছে।




কখন প্রস্তুতি শুরু করবেন ?
এখনই শুরু না করলে আর কখনোই হয়তো প্রস্তুতি শুরু করার উপযুক্ত সময় পাবেন না। যত আগে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করবেন, অনার্স পাশ করার পর তত তাড়াতাড়ি সফলতা পেয়ে যাবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
(বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডারদের ফেসবুক, ব্লগ পোষ্ট অবলম্বনে।)