









২০০৬ সালে শরীয়তপুরের আব্বাস আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৮ সালে চাঁদপুরের আল-আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। উভয় পরীক্ষায়ই আমার বাণিজ্য বিভাগ ছিল। তবে অনার্সে এসে ইংরেজি বিষয়ের প্রতি আগ্রহী হই। ভর্তি হই চাঁদপুর সরকারি কলেজে। তখন থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল, সরকারি চাকরি করব। সেভাবেই নিজেকে তৈরি করা শুরু করি। তাই বলে যে সারা দিন বই নিয়ে বসে থাকতাম, এমনটা নয়। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিল। সাহিত্য নিয়ে আগ্রহ থাকায় অনেক বই পড়তাম। পাশাপাশি টিউশনি করতাম। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কারণে বিভিন্ন বিষয়ের বেসিক ভিতটা তখনই গড়ে ওঠে। ২০১৫ সালে অনার্স পাস করি। নিজের প্রস্তুতি যাচাই





করার জন্য একটি কলেজে ইংরেজির প্রভাষক পদে চাকরির জন্য আবেদন করি। প্রথম ইন্টারভিউতেই চাকরিটা হয়ে যায়। প্রতিদিন দুটি ক্লাস। তা ছাড়া ভালো চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে সমস্যা হবে না, এসব ভেবে কলেজের মনোরম পরিবেশে মুগ্ধ হয়ে চাকরিতে যোগ দিই। ছয় মাস চাকরি করার পর ২০১৬ সালে মাস্টার্স পরীক্ষার জন্য চাকরিটা ছেড়ে দিই। প্রতিদিনই আমাদের গ্রুপ ডিসকাশন বা দলীয় আলোচনা চলত। একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করতাম। চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে সরকারি চাকরির দিকে মনোযোগ দিই। ২০১৫ সাল থেকে আমরা তিন বন্ধু একসঙ্গে থাকতাম। একজন আমার বিভাগের অর্থাৎ ইংরেজির, আরেকজন অর্থনীতির। তিনজনই একসঙ্গে চাকরির প্রস্তুতি নিয়েছি। এর মধ্যে ১২তম ও ১৩তম শিক্ষক





নিবন্ধন পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়ার; কিন্তু পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে তার জন্য প্রস্তুতি ও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আমার বিশ্বাস ছিল, পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। নিজেকে প্রস্তুত করতে বিভিন্ন গাইড সিরিজের বাংলা, সাধারণ জ্ঞান বইগুলো নিয়মিত পড়েছি। গণিতের জন্য মাধ্যমিক শ্রেণির গণিত বইয়ের অঙ্কগুলোও সমাধান করেছি। তা ছাড়া বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতি বই থেকে অঙ্ক চর্চা করেছি। তবে বন্ধুদের সঙ্গে থাকায় কাজটি সহজ হয়েছে। যে যেখানেই আটকিয়েছে, অন্য একজন সেটার সমাধান করেছে, বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা একজন আরেকজনের মডেল টেস্টও নিয়েছি। ইংরেজির গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় চাকরির জন্য ইংরেজির আলাদা কোনো প্রস্তুতি নিইনি। তবে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার





প্রশ্নব্যাংক সমাধান করেছি। বাংলার জন্য সৌমিত্র শেখর স্যারের বইটি পড়েছি। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বই থেকে এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম। এভাবে বাংলার প্রস্তুতিটা ঝালিয়ে নিয়েছি। তবে সাধারণ জ্ঞানের অংশটা একটা বড় পার্ট। সাধারণ জ্ঞানের জন্য নতুন বিশ্ব বই পড়েছি। নিয়মিত বাসায় পত্রিকা রাখতাম। পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করে রাখতাম। মাসিক চাকরির প্রস্তুতিমূলক ম্যাগাজিনেও চোখ বুলিয়ে নিতাম। তবে প্রতিদিনই আমাদের গ্রুপ স্টাডি-ডিসকাশন বা দলীয় পড়াশোনা-আলোচনা চলত। একজন আরেকজনকে প্রশ্ন করতাম। ২০১৮ সালে এসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিই। পরীক্ষার দুই মাস আগে থেকে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিতে থাকি। প্রতিদিন





রুটিনমাফিক পড়াশোনা করেছি। বেশি বেশি মডেল টেস্ট সলভ করেছি। তবে আমার ক্ষেত্রে চাকরির প্রস্তুতিতে ‘দলীয় আলোচনা’ সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বাংলা, গণিত, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান মিলে ৮০টি প্রশ্ন ছিল। সময় ছিল দুই ঘণ্টা। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের মান ১.২৫। প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে প্রথমে একবার পড়ে নিয়েছি। আত্মবিশ্বাস ছিল যে বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর পারব। তারপর মাথা ঠাণ্ডা রেখে উত্তর দাগানো শুরু করি। ৮০টি প্রশ্নের মধ্যে ৭০টির ওপরে উত্তর দিয়েছিলাম। পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মাল যে এবার চাকরিটা পেয়ে যাব! ওই বছরই (২০১৮) ফল বের হলো। চাকরি পেয়ে যাই। পোস্টিং হলো চাঁদপুরের হাসান আলী মডেল





সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। নতুনদের উদ্দেশে বলব, আগে লক্ষ্য ঠিক করে নেবেন। তারপর পরিকল্পনামাফিক এগোবেন। তাহলে সফলতা ধরা দেবেই। যে বিষয়ে দুর্বল মনে হবে, সেগুলো ভালো করে অনুশীলন করুন। ইংরেজি ও গণিতের প্রতি একটু বেশি জোর দিন। নিয়মিত চর্চা যদি হয় নেশা, তবেই পাবেন আপনার মনের মতো পেশা! যেকোনো সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আগে বিগত বছরের প্রশ্নপত্র ঘাঁটুন। তাহলেই অনেকটা বুঝে যাবেন কিভাবে পড়তে হবে কিংবা কেমন প্রশ্ন আসবে।
























