







জগদ্বিখ্যাত সাহিত্যিক অার্নেস্ট হেমিংওয়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস “The Old Man and The Sea”. এই উপন্যাস একজন আশাহত দুর্বল মননের অধিকারীকে আলোর সন্ধান দিতে পারে। যোগাতে পারে বেঁচে থাকার, জীবন যুদ্ধে সকল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। এই উপন্যাসের একটি কালজয়ী উক্তি হচ্ছে- “মানুষের জন্ম হার স্বীকারের জন্য নয়। মানুষ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কিন্তু তার দ্বারা পরাজয় স্বীকার শোভা পায় না।” উল্লেখ্য যে এই উপন্যাস রচনার জন্য হেমিংওয়ে ১৯৫৪ সালে নোবেল প্রাইজ পান।




#কাহিনী_সংক্ষেপঃ- উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘সান্তিয়াগো’ নামক এক বৃদ্ধ জেলে। সে একটানা চুরাশি দিন মহাসাগরের বুকে মাছ ধরার বৃথা চেষ্টা চালিয়েছে। প্রথম চল্লিশ দিন তার সাথে নৌকায় কিশোর বয়সী এক ছেলে ছিল। ছেলেটির নাম ম্যানোলিন। তার বাবা মায়ের নির্দেশে ম্যানোলিন অন্য নৌকায় যায় এবং পরের সপ্তাহেই বড় বড় মাছ পায়। কিন্তু ছেলেটি তার পাঁচ বছর বয়স থেকেই বুড়োর সাথে মাছ ধরতে যেত এবং বুড়ো সান্তিয়াগোই তাকে মাছ ধরা শিখিয়েছে। তাই ম্যানোলিন বুড়োকে শ্রদ্ধা করতো এবং ভালোবাসতো। বুড়ো যখন ৮৪ তম দিনে মাছ ধরায় ব্যার্থ হয়ে ফিরে এলো তখন ম্যানোলিন বুড়োর জিনিসপত্র এগিয়ে নিয়ে বাসায় পৌছে দিল এবং আশ্বাস দিল যে সে পরেরদিন বুড়োর সাথে তাকে সাহায্য করার জন্য একত্রে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তু বুড়োর আত্মবিশ্বাস ছিল অদম্য। তাই সে বললো যে সে একাই মাছ ধরতে যাবে এবং মাছ ধরবেও ।




সান্তিয়াগোকে ৮৫ তম দিন ভোরবেলায় নৌকায় তুলে দিলো ম্যানোলিন। বুড়ো নৌকা নিয়ে মাঝ-সাগরে চলে গেল। সেখানে সে মহাসাগরের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করলো। চারদিকে শুধু পানি আর আকাশ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সে কিছু উড়ন্ত মাছ দেখলো, যাদেরকে সাগরে একঝাঁক ডলফিন এবং আকাশে একটি চিল তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। নীল সাগরের জলে সে চারটি বড়শি পেতে রাখলো এবং কয়েকঘন্টা পরে একটি বড়শিতে একটি বিশাল মাছ ধরা পড়লো। মাছটির ভর ছিল এতই বেশি এবং তা এতই বড় ছিল যে সেটা পানির তলে নৌকার সমান্তরালে চলছিল। মাছটির মুখে বড়শি গেঁথে যাওয়ার কারণে তার এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নৌকাটাও এগিয়ে যাচ্ছিল অজানা দিগন্তে। বুড়ো সর্বশক্তি খাঁটিয়েও মাছটাকে বধ করতে পারছিল না।




সে সারা রাত-দিন জেগে, কখনও খেয়ে, কখনও না খেয়ে মাছের বড়শি ধরে দাড়িয়ে, বসে ও শুয়ে থাকা অবস্থায় মাছটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যায়। মাছটির গায়ে ছিল অসুরের শক্তি এবং মাছটির সাথে বুড়ো দুইদিন, দুইরাত ধরে লড়াই করে যাওয়ার পরেও মাছের শক্তি কমে যায়নি। মাছটিকে বৃদ্ধ ক্ষণিকের জন্য দেখতে পেয়েছিল। তার অনুমানে মাছটি নৌকার চেয়েও অনেক বড়। মাছটির অফুরন্ত প্রাণশক্তির কারণে একসময়ে বৃদ্ধ মাছটির প্রেমে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে মাছের হ্যাঁচকা টানে নৌকার পাটাতনে পড়ে গিয়ে বৃদ্ধ ক্ষতবিক্ষত হয়। তবুও সে মাছটির মতোই নাছোড়বান্দা! সে মাছকে কিছুতেই হাতছাড়া হতে দিবে না, ঐদিকে মাছটিও বৃদ্ধের কাছে ধরা দিবে না। মাছটি টানা দুইদিন, দুইরাত ধরে নৌকাটাকে টেনেও ক্লান্ত হয়নি। বৃদ্ধ কি মাছটিকে বধ করতে পারবে? তারপক্ষে কি নৌকার চেয়েও বৃহৎ মাছটিকে অক্ষত অবস্থায় তীরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে?




নাতিদীর্ঘ এই উপন্যাসের পুরোটা জুড়েই নিগূঢ়তম ভাব নিহিত রয়েছে। মাঝি সান্তিয়াগো বৃদ্ধ হলেও তার মাঝে রয়েছে প্রবল আত্মবিশাস। এই আত্মবিশ্বাসের জোরেই সে একটানা তিনদিন ধরে অবিরামভাবে তার তুলনায় সহস্রগুণ শক্তিশালী এক বিশালাকৃতির মার্লিন মাছের সাথে লড়াই করে। মূলত ঐ মার্লিন মাছটি পৃথিবীর সব মহত্ত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক। সমুদ্রও এখানে রূপকার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। মূলতো, মানুষের জীবন সমুদ্রের মতোই প্রবাহমান। জীবন কখনও অনুকূলে চলে আবার কখনও চলে প্রতিকূলে। আর আমরা সেই প্রবাহমান জীবনস্রোতে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাই।




#পাঠ_প্রতিক্রিয়া:- আমরা আমাদের জীবনে কোনো অমূল্য সম্পদ আহরণের জন্য আজীবন অমানবিক পরিশ্রম করি। হয়তো হাজারো প্রতিকূল পরিবেশে মেধা খাঁটিয়ে বিবেকের সাথে পরিশ্রম করে অবশেষে সেই অমূল্য সম্পদটিকে অর্জন করি। আবার কেউ কেউ আদৌ সেই সম্পদ অর্জন করতে পারে না। কিন্তু দেখা যায় সেই অর্জিত অমূল্য সম্পদের সিংহভাগই পরিপার্শ্বের সবাইকে বিলিয়ে দিয়ে আমরা নিজেদের জন্য খুব কমই সঞ্চয় করতে পারি। তাই বলে আমরা জীবন যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার জন্য হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারিনা। কারণ, মানুষের জন্ম হয়েছে বিজয় লাভের জন্য। সে ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু মাথানত করবে না কখনও।



