







৩৮ তম ভাইভা, ৪০ তম বিসিএস লিখিত ও ৪১ তম প্রিলি প্রস্তুতিঃ
চীন পাকিস্তান সম্পর্ক এবং ভারত-চীন-পাকিস্তান নতুন মেরুকরণ
————————————————————————-
চীন পাকিস্তান সম্পর্কের ইতিহাসঃ
———————————————-
পাকিস্তান এর স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ১৯৫০ সালে চীনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় মুসলিম প্রধান দেশ পাকিস্তান। বিশ্বের অকমিউনিস্ট দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানও একটি দেশ যারা চীনকে গণপ্রজাতন্ত্রী হিসেবেই স্বীকার করেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সহায়তায় চীন পরিদর্শন করেন ইউএস সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরি কিসিঞ্জার। এরপর ১৯৭৮ সালে খুলে দেওয়া হয় কারাকোরাম হাইওয়ে। যে পথে উত্তর পাকিস্তান থেকে সোজাসুজি দক্ষিণ চীনে যাওয়া যায়। সুগম হয় স্থলপথের যোগাযোগ। দুই দেশের মধ্যে বাড়ে আন্তরিকতা ১৯৮৬ সালে পাকিস্তান এবং চীন যৌথ নিউক্লিয়ার সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৯৯ সালেই পাক পাঞ্জাবে ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন নিউক্লিয়ার প্ল্যান্ট তৈরি হয়। সহযোগিতা করে একমাত্র চীন।




চীন পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন সুচনাঃ
———————————————–
দুদেশের সম্পর্ক নতুন যুগে প্রবেশ করে যখন চীনা প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং ২০১৫ প্রথমবার পাকিস্তানে প্রেসিডেন্সিয়াল ভিজিটে যান। CPEC চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে।এরপর একে একে পাকিস্তানে বাড়তে থাকে চীনা বিনিয়োগ। সম্পর্ক গভীর হতে থাকে দুদেশের মধ্যে । সাথে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও বৃদ্ধি পায় । চীনা ভাষায় পুরোদস্তুর একটি সাপ্তাহিক কাগজ বের হচ্ছে পাকিস্তান থেকে। ইসলামাবাদে, অনেক স্কুলে শিশু শ্রেণিতেই চীনা শিশুদের দেখা মেলে এখন। পাকিস্তানে চীনের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের এত বাড়বাড়ন্ত প্রধানত উভয় দেশের অর্থনৈতিক করিডরের সূত্রে। আগামী বছর নাগাদ দুদেশের পণ্য বাণিজ্যের আকার ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। অথচ ২০০৩-এ এটা ছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার।




চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর ও ভারতের উদ্বেগঃ
—————————————————————————-
সিপিইসি(CPEC-China Pakistan Economic Corridor) প্রকল্প হল চীন ও পাকিস্তান এর মধ্যে গড় ওঠা এক বিশেষ অর্থনৈতিক করিডর নির্মিত হচ্ছে চীনের সহায়তায়। করিডরটি চীনের প্রস্তাবিত ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড নীতির অন্তর্গত । এই করিডরটি মোট দৈর্ঘ্য হবে ২,০০০ কিলোমিটার ।এটি পাকিস্তান এর গদর শহরের গদর বন্দর থেকে চীনের শিনচিয়াং প্রদেশের কাশগর পর্যন্ত নির্মান করা হবে। এই প্রকল্পে গদর ও কাশগর মহাসড়ক ,রেলপথ দ্বারা যুক্ত হবে। এছাড়া এই পথে অপটিকাল ফাইবার বসানো হবে দ্রুত যোগাযোগের জন্য। তেল ও গ্যাসের পাইপ লাইন এই পথে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।এই প্রকল্পে গদর ও কাশগর এর সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচি যুক্ত হবে। করাচি থেকে খাইবার পাখতুন পর্যন্ত রেল পথকে আধুনিক করা হবে।যেখানে বিনিয়োগ ইতিমধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এবং প্রায় ৫০-৬০ বিলিয়ন ডলার পৌঁছাবে তা।




চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর নিয়ে ভারত খুবই উদ্বিগ্ন । চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবিওআর) প্রকল্পে বড় দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতই আপত্তি জানায়। কারন এর সঙ্গে ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে। কারণ এই রাস্তা যাচ্ছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে। এই জায়গাকে নয়াদিল্লি চিরকালই ভারতের অংশ বলে দাবি করে এসেছে।ভারতের আশঙ্কা, এই প্রকল্পের অজুহাতে চীনা সাবমেরিন পাকিস্তানের গাওদার বন্দরে অবস্থান করবে এবং চীন পারস্য উপসাগরে নজরদারি করবে। এই জলরাশি ব্যবহার করে বিশ্বের পরিবহন জাহাজের বেশির ভাগই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ায় যাতায়াত করে।




কাশ্মীর সংকটে পাকিস্তানের পাশে চীন,উদ্বিগ্ন ভারতঃ
—————————————————————
বেইজিং সফরকালীন সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তিনি কাশ্মির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে সমর্থন করবে তার সরকার। পাকিস্তানের সমস্ত ‘প্রধান’ বিষয়ে চীন তাদের পাশে আছে। দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের যৌথ বিবৃতিতে ‘জাতিসঙ্ঘের সনদ মেনে কাশ্মির সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে’ বলে মন্তব্যও করা হয়েছে। জিনপিং বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে যে পরিবর্তন আসুক, পাকিস্তানের সাথে চীনের বন্ধুত্ব কখনোই ভাঙ্গেনি, বরং পাথরের মতো দৃঢ় থেকেছে। বেইজিং-ইসলামাবাদ পারস্পারিক সহযোগিতাও সব সময়ই রয়েছে। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি।পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রের দিক দিয়ে পাকিস্তানকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করছে চীন। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে চীন বিপুল অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও জম্মু কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রকল্পে আন্তর্জাতিক সহায়তার বিরোধিতা করেছে।আর এভাবে চীন ভারতকে কূটনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।




আফগানিস্তান সংকট নিয়ে চীন-ভারত-পাকিস্তানঃ
———————————————————–
ভারতের দীর্ঘদিনের অভিযোগ পাকিস্তানের হয়ে আফগানিস্তানে তৎপরতা চালাচ্ছে চীন। সম্প্রতি তালেবানের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করে সেই জল্পনার সত্যতা জানান দিলো বেইজিং। ভারতীয় গণমাধ্যম জানায়, কোনো রাখঢাক না রেখেই তালেবান নেতা মোল্লা আবদুল গনি বারদারের সঙ্গে বৈঠকের কথা জানিয়েছে চীন।তালেবানের চার প্রতিষ্ঠাতার একজন মোল্লা বারদার। তিনি মোল্লা ওমরের পরেই ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি তাকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে পাকিস্তান। এছাড়া চীন আফগানিস্তানকে ও চীন পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর এ সংযুক্ত করতে চায় । অন্যদিকে পাকিস্তানের সাথে চীনের অবিচ্ছেদ্য কৌশলগত ঘনিষ্ঠতার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আফগানিস্তান ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। প্রকৃতপক্ষে সকল নিকট প্রতিবেশির মধ্যে কাবুলই ভারতের একমাত্র কৌশলগত মিত্র। ভারত, ইরান ও আফগানিস্তান নতুন একটি ট্রানজিট রুট গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। নতুন ট্রানজিট রুটটি চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ইরান ও আফগানিস্তানকে ভারতের সাথে যুক্ত করবে । চাবাহার বন্দর দিয়ে নতুন ট্রানজিট নির্মাণের ভারতীয় প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানকে এড়িয়ে যাওয়া এবং চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরকে চ্যালেঞ্জ করা ।
আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বহুদিনের। তালেবানের পতনের পর থেকে আফগানিস্তানে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় হয়ে উঠে ভারত। অন্যদিকে আফগানিস্তানের সরকার প্রায়শই অভিযোগ করে যে তালেবান বিদ্রোহীদের পেছনে প্রধান মদতদাতা হচ্ছে পাকিস্তান।




পাকিস্তান ও চীন পরস্পরকে ‘যেকোনো পরিস্থিতিতে সেরা বন্ধু’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু কার্যত যা হচ্ছে, পাকিস্তান ক্রমে অর্থনৈতিকভাবে চীনের একটি বৃহৎ বাজার এবং সামরিক দিক থেকেও চীনের সদয় সহায়তার ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারত ও নতুন বলয় তৈরী করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । ভারত-চীন-পাকিস্তান এর কৌশলগত পদক্ষেপ দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে নতুন এক বলয় তৈরী করেছে। এই বলয়ে কে কোন পক্ষ অবলম্বন করবে সেটাই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে ।




______________________________________________
★কোন সাজেশান থাকলে কমেন্টে জানাবেন
সুত্রঃ ১। বিভিন্ন দেশীয় আন্তুর্জাতিক গনমাধ্যম থেকে সংগৃহিত , অনুদিত,সম্পাদিত একটি মৌলিক লিখা। কপি করলে কার্টেসি দিতে ভুলবেন না //
মুহাম্মদ ইরফান উদ্দীন
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা(সুপারিশপ্রাপ্ত)
৩৭ তম বিসিএস নন-ক্যাডার







