



সতর্কবাণী, বিসিএস পরীক্ষার জটিল জাল!
সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী : খুব সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতাটাই এবার হতে যাচ্ছে। তুমুল প্রতিযোগিতা হবে। ৩৫তম বিসিএসের প্রশ্ন কঠিন ছিল কিন্তু কাট মার্কসও তো কম ছিল। অর্থাৎ হিসেব সমানে সমানে। ৩৬তম বিসিএসের প্রশ্ন গতানুগতিক ছিল তাই কাট মার্কস ৩৫তম বিসিএস এর তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি ছিল। অর্থাৎ এখানেও হিসেবটা সমানে সমানে। কিন্তু ৩৭তম বিসিএস এর প্রশ্ন এভারেজ ছিল। ৩৮তম বিসিএসের প্রশ্ন সহজ কিংবা কঠিন যাই হোক কোয়ালিফাই হওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।




কারণ ৩লাখ ৫০ হাজারের ও বেশি প্রার্থীর বিপরীতে পদ সংখ্যা মাত্র ২০২৪জন (প্রায়)। তার মধ্যে সবাই কিন্তু এই ২০২৪ জনের মধ্যে নেই। কারণ টেকনিক্যাল ক্যাডার ছাড়া যে পদগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত সেগুলো হলো জেনারেল ক্যাডার (পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, ট্যাক্স, অডিট…)। এত বেশি প্রার্থী অথচ পদের সংখ্যা অনেক অনেক কম। তাছাড়া পিএসসি এমনিতেই গত ৩বার ক্রমান্বয়ে প্রিলিতে কম পাশ করাচ্ছেন। সব মিলিয়ে একটা তুমুল প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে।




এবারের কম্পিটিশন আরো অশনীসংকেত এই কারণে, ৩৮তম বিসিএস দেয়ার পর আপনি ৩৯তম দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। কারণ ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস হলে সেটা শুধু ডাক্তারদের জন্য। একেতো এক বিসিএস থেকে অন্য বিসিএসের দূরত্ব অনেক বেশি, তার উপর যদি মাঝখানে একটা বিসিএসে আবেদন করার সুযোগই না থাকে তবে এর মধ্যে ৪০তম বিসিএস আসতে আসতে হয়তো অনেকের বয়স শেষের দিকে চলে যাবে। এতে মনের জোর কমতে থাকবে। আবার এমনও হবে কারো কারো বয়সই চলে যাবে।




অর্থাৎ ৪০তম বিসিএস দেয়ার সুযোগ থাকবে না বয়সের কারণে। তার উপর মাঝখানে এক বিসিএস গ্যাপ হওয়ার কারণে ৪০তম বিসিএসেও রেকর্ড সংখ্যক প্রার্থী আবেদন করবে। কারণ ৩৮তম বিসিএসে সে সাড়ে ৩ লাখের মধ্যে ২০২৪ জন (যারা ক্যাডার হবেন তারা) ছাড়া বাকিরা সবাই আবার ৪০ তম বিসিএসে অংশ নিবে। এছাড়া ওই ২০২৪ জন যারা বিসিএস ক্যাডার ৩৮ এ হবেন, তাদের কেউ কেউ আবার ৪০তম বিসিএসেও অংশ নেবেন নিজের পছন্দের প্রথম তালিকার ক্যাডারের জন্য। তাছাড়া ৩৮ থেকে ৪০ তম বিসিএসের সার্কুলার আসা পর্যন্ত অনেকেই অলরেডি গ্র্যাজুয়েট হয়ে যাবেন, যারা নতুন ক্যান্ডিডেটস হিসেবে যুক্ত হবেন। তার মানে হিসেবটা কিন্তু বেশ জটিল ও ভয়ানক।




আমি সত্যজিৎ যতটা না বুঝি, আপনি আপনার জীবন নিয়ে তার চেয়ে বেশি বুঝেন। আপনার যদি সত্যিই চাকরি দরকার হয় তবে, ৩৮তম বিসিএস এমনভাবে দিতে হবে যেন বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও অন্তত নন ক্যাডার হিসেবে সিলেক্টেড হন। কারণ ৩৪তম বিসিএস থেকে নন ক্যাডারদের চাকরিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।




বিসিএসের ইতিহাসে এমন অনেক কাহিনী আছে, যিনি আগের বিসিএসে ভাইভা ফেস করেছেন দেখা যায় তাদের কেউ কেউ পরের বিসিএসে প্রিলিতে টিকতে পারেন না। কাজেই আপনি যে মাত্রার প্রার্থীই হোন না কেন, যত ভালো প্রস্তুতিই আপনার থাকুক না কেন, পরীক্ষার কেন্দ্রে একটু সজাগ থাকবেন। খুব কম দাগানো কিংবা সেফ জোনে থাকার পরও অজানা প্রশ্ন বেশি দাগানো দুটিই বিপজ্জনক। এ প্রসঙ্গে আমার আর্টিকেল “সাহস থাকলে ফেল করুন (প্রিলির চ্যালেঞ্জ): সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী ” শিরোনামে পূর্বে প্রকাশিত লেখাটি পড়া থাকলে এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা পাবেন। কারণ বিভিন্ন বছর নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিএস ক্যাডার ও ক্যারিয়ার এক্সপার্টদের সাথে আলোচনা করেই লেখাটি লিখেছি। তবে লেখাটা পড়া না থাকলে এ মুহুর্তে সেটি আর খোঁজারও দরকার নাই। কারণ সময় নষ্ট হবে।




আমি এক্সপার্ট নই, তবে একজন ক্যান্ডিডেট হিসেবে আপনি আমার চেয়ে বেশি বুঝেন। আমি শুধু তাই বুঝাতে এসেছি, যা আপনি হয়তো উপযুক্ত সোর্সের কারণে বুঝতে পারেন না। ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করার কারণে এসব তথ্য আমাকে রাখতে হয় আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্যে।




ঠান্ডা মাথায় শেষ প্রস্তুতি নিন। পরীক্ষার শেষ মুহুর্তে যদি শুনেন প্রশ্ন ফাঁসের কথা, কিংবা টাকার বিনিময়ে কেউ প্রশ্ন দিবে এমন কথা তবে তার সাথে ২য় বার এ নিয়ে আলাপ করবেন না। প্রতিবছরই এমন গুজব উঠে। কেউ কেউ এসব গুজবে বিশ্বাস করে ভুয়া একটা প্রশ্ন কিনে নিয়ে দিনরাত জেগে সেটা সলভ করে, পরেরদিন খুশি খুশি ভাব নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে যায়। কিন্তু প্রশ্ন পাওয়া মাত্র দেখা যায় আগের দিনের পাওয়া প্রশ্নের সাথে মূল পরীক্ষার প্রশ্নের কোনো মিল নেই। ঠিক ওই মুহুর্তে আপনি এত বেশি হতাশ হবেন যে, জানা প্রশ্ন ও আর উত্তর করতে পারবেন না। অতএব গুজবে কান না দিয়ে প্রার্থনা করুন, প্রস্তুতি নিন। আমার আর্টিকেলগুলো পত্রিকায় পাবেন আর ক্যারিয়ার সম্পর্কিত বিস্তারিত লেখা আমার টাইমলাইনে ( fb: Satyajit Chakraborty) ও পাবেন।




আর কোনো কথা নয়। শুভ হোক পথচলা। এই আর্টিকেলটা পড়ে আপনাকে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু বিসিএসকে একমাত্র পথ হিসেবে ভাববেন না। বিসিএস খুব চমৎকার একটা পথ। কিন্তু ক্যারিয়ার ওয়ার্ল্ডে এটা একমাত্র পথ না। তবে স্বপ্ন যদি একমাত্র বিসিএসই হয়ে থাকে, তবুও নিজেকে নিরাপদ রাখতে পাশাপাশি অন্য নিয়োগ পরীক্ষায় ও অংশ নিন। আপনি মেধাবী হতে পারেন কিন্তু এটাও মেনে নিন যে পরিমাণ পদসংখ্যা শুন্য থাকে, আপনার মত ব্রিলিয়ান্ট কিংবা আপনার চেয়েও ব্রিলিয়ান্টের সংখ্যা শুন্য পদের চেয়ে অন্তত ৫ গুণ বেশি। অতএব সিদ্ধান্ত আপনার কিভাবে কোন পথে যাবেন।



