









জাতীয় কন্যা শি’শু দিবস রোববার (৩০ সেপ্টেম্বর)। কন্যা সন্তানকে ইসলাম কেমন মর্যাদা দিয়েছে, ইসলামে কন্যা সন্তানের অব’স্থান কেমন—এ নিয়ে বাংলানিউজে’র বিশে’ষ আয়োজন।





স্মর্তব্য যে, প্রকৃতপক্ষে সন্তান-সন্ততি (ছেলে-মেয়ে উভ’য়েই) আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত ও শ্রেষ্ঠ উপহার। ইসলাম উভ’য়কেই আ’লাদা সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে। কাউকে কারও থেকে ছোট করা হয়নি কিংবা অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়নি। কন্যা সন্তানের মাধ্যমে আল্লাহ পরিবারে সুখ ও বরকত দান করেন। হাদিসে এমন কথা উল্লেখ হয়েছে।





কিন্তু আমাদের সমাজে এখনো অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জ’ন্ম নিলে ইতিবাচক চোখে দেখা হয় না।
অনেকে আবার মেয়ে সন্তানের মায়ের ওপর নাখোশও হন। বিভিন্ন কায়দায় অসন্তোষ প্র’কাশ করেন। কন্যা সন্তান হলে অপছন্দ করা, তাদের স’ঙ্গে দুর্ব্যবহার করা এবং তাদের লালন-পা’লনের দায়িত্ব ঠিকভাবে পা’লন না করা, ইসলামপূর্ব বর্বর জাহেলি যুগের কুপ্রথা।





এমন কাজে আল্লাহ তাআলা ভীষণ অসন্তুষ্ট হন।আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অ’ন্ধকার হয়ে যায় এবং অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে।





সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে নাকি তাকে মাটির নিচে পুতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফয়সালা খুবই নিকৃষ্ট।’ (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯) রাসুল (সা.) মেয়েদের অনেক বেশি ভালোবাসতেন। মেয়েরা ছিল তার আদরের দুলালী। আজী’বন তিনি কন্যাদের ভালোবেসেছেন এবং কন্যা সন্তান প্রতিপা’লনে অন্যদের উদ্বুদ্ধ ক’রেছেন।





কন্যা সন্তান লালন-পা’লনে অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্য’ক্তি দু’টি কন্যাকে তারা সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন-পা’লন করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মতো পাশাপাশি আসবো (অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলগু’লি মিলিত করে দেখালেন)’।





(মুসলিম, হাদিস নং: ২৬৩১, তিরমিজি, হাদিস নং: ১৯১৪, মুসনাদ আহম’দ, হাদিস নং: ১২০৮৯, ইবনু আবি শাইবা, হাদিস নং: ২৫৯৪৮) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করনে, ‘যার ঘরে কন্যা সন্তান জ’ন্মগ্রহণ করলো, অতঃপর সে ওই কন্যাকে কষ্ট দেয়নি, মেয়ের ওউপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে তার ওপর প্রধান্য দেয়নি, তাহলে ওই কন্যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন।’ (মুসনাদ আহম’দ, হাদিস নং: ১/২২৩)





হযরত আবদুল্লাহ উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ওই নারী বরকতময়ী ও সৌভাগ্যবান, যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা, (সন্তানদানের নেয়ামত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে) আল্লাহ তায়ালা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেন, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।’ (কানযুল উম্মাল ১৬:৬১১)





আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমা’র কাছে এক নারী এলো। তার স’ঙ্গে তার দুই মেয়ে। আমা’র কাছে সে কিছু প্রার্থনা করলো। সে আমা’র কাছে একটি খেজুর ছাড়া কিছুই দে’খতে পেলো না। আমি তাকে সেটি দিয়ে দিলাম। সে তা গ্রহণ করললো এবং তা দুই টু’করো করে তার দুই মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেলোল না। তারপর নারীটি ও তার মেয়ে দু’টি উঠে পড়লো এবং চলে গেলো।





ইত্যবসরে আমা’র কাছে নবী (সা.) এলেন। আমি তার কাছে ওই নারীর কথা বললাম। নবী (সা.) বললেন, ‘যাকে কন্যা দিয়ে কোনো কিছুর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় আর সে তাদের প্রতি যথাযথ আচরণ করে, তবে তা তার জন্য আ’গুন থেকে র’ক্ষাকারী হবে।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৮৬২; মুসনাদ আহম’দ, হাদিস নং : ২৪৬১৬)





প্রস’ঙ্গত কন্যা সন্তান প্রতিপা’লনে শুধু পিতাকেই নয়; ভাইকেও উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বোনের কথাও বলা হয়েছে হাদিসে। যারা মনে করেন, মেয়ে বা বোনের পেছনে টাকা খরচ করলে ভবিষ্যতের তার কোনো প্রাপ্তি নেই, তারা মূলত ভুলের মধ্যে আছেন।আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কারও যদি তিনটি মেয়ে কিংবা বোন থাকে অথবা দু’টি মেয়ে বা বোন থাকে, আর সে তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভ’য় করে এবং তাদের স’ঙ্গে সদাচার করে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (মুসনাদ আহম’দ, হাদিস নং : ১১৪০৪; আদাবুল মুফরাদ লিল-বুখারি: ৭৯)





কন্যা সন্তান প্রতিপা’লনে যেন বৈষম্য না করা হয় এবং বস্তুবাদী ব্য’ক্তিরা যেন হীনমন্যতায় না ভো’গেন, তাই তাদের কন্যা প্রতিপা’লনে ধৈর্য ধ’রার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। শোনানো হয়েছে পরকালে বিশাল প্রাপ্তির সংবাদ।আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার তিনটি কন্যাসন্তান থাকবে এবং সে তাদের কষ্ট-যাতনায় ধৈর্য ধ’রবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুহাম্ম’দ ইবন ইউনূসের বর্ণনায় এ হাদীসে অতিরি’ক্ত অংশ হিসেবে এসেছে) একব্য’ক্তি প্রশ্ন করলো, হে আল্লাহর রাসুল, যদি দু’জন হয়? উত্তরে তিনি বললেন, দু’জন হলেও। লোকটি আবার প্রশ্ন করলো, যদি একজন হয় হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, একজন হলেও।’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান : ৮৩১১)





আউফ বিন মালেক আশজায়ি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্য’ক্তির তিনটি মেয়ে রয়েছে, যাদের ওপর সে অর্থ খরচ করে বিয়ে দেওয়া অথবা মৃ’ত্যু পর্যন্ত, তবে তারা তার জন্য আ’গুন থেকে মু’ক্তির কারণ হবে। তখন এক নারী বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আর দুই মেয়ে হলে? তিনি বললেন, দুই মেয়ে হলেও।’ (বাইহাকি, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং : ৮৩১৩)





আল্লাহর উপহার ভেবে এবং বাস্তবিক ভালোবেসে যারা কন্যা সন্তানদের প্রতিপা’লন করবে, সার্বিক তত্ত্বাবধান করবে, আল্লাহ তাআয়া তাদের উত্তম প্রতিদান দেবেন। আর যারা অবজ্ঞা করবে ও তাদের লালন-পা’লনে অবহেলা করবে, আল্লাহ তাআলা তাদের শা’স্তি দেবেন। তাই কন্যা সন্তানকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসা উচিত। সেজন্য আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।





























